HISTIRY OF FOOTBALL ( 1994 FOOTBALL WORLD CUP )

 

usa 1994,world cup 1994,1994 world cup,romania 1994,bulgaria 1994,romania usa 1994,usa 1994 world cup,1994 fifa world cup,world cup final 1994,world c

১৯৯৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ

এটি ফিফা কর্তৃক পুরুষ জাতীয় ফুটবল দলের ১৫ তম সংস্করণ। এই বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৯৪ সালের ১৭ জুন থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টি সম্পন্ন হয়। আয়োজক দেশের নয়টি শহরে খেলাগুলো সম্পন্ন হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ফুটবল  জনপ্রিয়তা কম থাকার পরও বিশ্বকাপ ইতিহাসের আর্থিকভাবে সবচেয়ে বেশি সফল বিশ্বকাপ এটি। এই বিশ্বকাপের মাধ্যমে ব্রাজিল তাদের ৪র্থ শিরোপা অর্জন করে। এই টুর্নামেন্টে মোট ৫২ টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। টুর্নামেন্টে মোট গোল হয় ১৪১ (ম্যাচ প্রতি গড় ২,৭১) টি। সম্পূর্ন টুর্নামেন্টে ৩,৫৯৭,০৪২ ( ম্যাচ প্রতি গড় ৬৯, ১৭৪) জন দর্শক উপস্থিত ছিলো। শীর্ষ স্কোরার হন যৌথভাবে রাশিয়ান ওলেগে এবং বুলগেরিয়ান রিস্টো। সেরা খেরোয়াড়ের খেতাব পান ব্রাজিলিয়ান রোমারিও। সেরা তরুণ খেলোয়াড় হন ডাচ ফুটবলার মার্ক ওভারমার্স। বেলজিয়াম গোল রক্ষক মিসেল প্রিউড’হোমে সেরা গোল রক্ষককের পুরষ্কার লাভ করে। ফেয়ার প্লে পুরষ্কার লাভ করে ব্রাজিল। পেনাল্টির মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন নির্ধাণের প্রথম বিশ্বকাপ ছিলো এটি। এই টুর্নামেন্টি দিয়াগো ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটায়।

স্বাগতিক দেশ নির্বাচন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মরক্কো এবং ব্রাজিল এই তিনটি দেশ এই বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য বিড করেছিলো। ব্রাজিলের স্টেডিয়ামের অবস্থা খুব একটা ভালোছিলোনা। অন্যদিকে মরক্কো নতুন স্টেডিয়াম নির্মানের উপর নির্ভরশীল ছিল। অপর দিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্পুর্ন প্রস্তুত ছিল এই বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য। ১৯৮৮ সালের ৪ জুলাই মসের ভোটে যুক্তরাষ্ট্র অর্ধেকের বেশি ভোট পেয়ে হোস্ট হিসাবে নির্বাচিত হয়। ৫০০ মিরিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে। তারা সফলভাবে এই বিশ্বকাপ আয়োজন করে এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় হয় এই টুর্নামেন্টি।

মাসকট

১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপের মাসকট ছিল স্ট্রাইকার। এটি লাল, সাদা এবং নীল রঙের ফুটবল ইউনিফর্ম পরা ফুটবলসহ একটি কুকুর। কারন কুকুর মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের সাধারন একটা পোষা প্রাণী।

অংশগ্রহণকারী দল

বাছায় পর্বের মাধ্যমে ২৪ টি দলকে নিয়ে মূল পর্বের খেলা শুরু হয়।নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন এবং মরক্কো এই বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করেছিলো। এই বিশ্বকাপের মাধ্যমে ফ্রান্স টানা দ্বিতীয়বার মূল পর্বে যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। এশিয়া থেকে সৌদি আরব এবং দক্ষিণ কোরিয়া মূল পর্বে জায়গা পায়। ২২ জন খেলোয়াড় নিয়ে ফিফার নিয়ম অনুযায়ি দল প্রত্যেক দল নির্বাচন করা হয়ছিল।

মূল পর্বে জায়গা পাওয়া ২৪ টি দল

দক্ষিণ কোরিয়া

সৌদি আরব

মরক্কো

ক্যামেরুন

নাইজেরিয়া

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (স্বাগতিক)

মেক্সিকো

ব্রাজিল

আর্জেন্টিনা

কলম্বিয়া

বলিভিয়া

গ্রীস 

জার্মানি

বেলজিয়াম

ইতালি

বুলগেরিয়া

রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড

রাশিয়া

রোমানিয়া

নেদারল্যান্ড

জুইজারল্যান্ড

নরওয়ে

সুইডেন

স্পেন

খেলার বিন্যাস

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ২৪ দলকে চার দলের ছয়টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। প্রতিটা জয়ের জন্য ৩ পয়েন্ট এবং ড্রয়ের জন্য ১ পয়েন্ট দেওয়া হয়। প্রতিটা গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ এবং ছয়টি গ্রুপ থেকে রেকর্ড সৃস্টিকারী এবং তৃতীয় স্থানে থাকা দলগুলোর মধ্যে আরো চারটি মোট ১৬ টি দলকে নিয়ে নকআউট পর্বের খেলা হয়।

প্রথম রাউন্ড রাউন্ড

গ্রুপ এ 

এই গ্রুপে সুইজারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রোমানিয়া এবং কলম্বিয়া ছিলো। এই গ্রুপ থেকে রোমানিয়া সর্বোচ্চ ৬ পয়েন্ট এবং সুইজারল্যান্ড ৪ নিয়ে দ্বিতীয় খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। স্বাগতিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয়েও নকআউট পর্বে এগিয়ে যায়। এই গ্রুপ থেকে কলম্বিয়া ৩ পয়েন্ট নিয়ে বিদায় হয়। টুর্নামেন্ট শেষে দেশে ফিরে আসার সময় কলম্বিয়ার ডিফেন্ডার আন্দ্রেস এসকোবারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। কারন তার নিজের গোলটি কলম্বিয়ার হারের কারন ছিল।

গ্রুপ বি

এই গ্রুপে সুইডেন, রাশিয়া, ব্রাজিল এবং ক্যামেরুন নিজেদের মুখোমুখি হয়। এই গ্রু থেকে ব্রাজিল সর্বোচ্চ ৭ পয়েন্ট অর্জন করে এবং সুইডেন ৫ পয়েন্ট নিয়ে নকআউট পর্বে এগিয়ে যায়। রাশিয়া ৩ পয়েন্ট এবং ক্যামেরুন ১ পয়েন্ট নিয়ে বাদ পড়লেও ক্যামেরুন তাদের চিহ্ন রেখে যায়। ক্যামেরুনের রজার মিলার ৪২ বছর বয়সে গোল করে বিশ্বকাপে সর্বোকালের সবচেয়ে বয়স্ক গোলদাতা হন।

গ্রুপ সি

স্পেন, জার্মানি, বলিভিয়া এবং দক্ষিন কোরিয়া এই গ্রুপে অংশ নেয়। এই গ্রুপ থেকে জার্মানি এবং স্পেন যথাক্রমে ৭ পয়েন্ট এবং ৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে অগ্রসর হয়। বলিভিয়া এবং দক্ষিন কোরিয়া যথাক্রমে ১ এবং ২ পয়েন্ট নিংয়ে বাদ পড়লেও বলিভিয়া তাদের চিহ্ন রেখে যায়। এই বিশ্বকাপে বলিভিয়া তাদের প্রথম গোল করে ইতিহাস সৃস্টি করে, এর আগে তারা ১৯৩০ বিশ্বকাপ এবং ১৯৫০ বিশ্বকাপে তারা কোনো গোল পায়নি।

গ্রুপ ডি

এই গ্রুপে আর্জেন্টিনা, বুলগেরিয়া, গ্রীস এবং নাইজেরিয়া অংশগ্রহণ করেছিলো। এই গ্রুপ থেকে নাইজেরিয়া, বুলগেরিয়া এবং আজেন্টিনা সমান ৬ পয়েন্ট নিয়ে যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় হয়ে নকআউট পর্বে এগিয়ে যায়।

গ্রুপ ই

বিশ্বকাপ ইতিহাসে এটিই একমাত্র গ্রুপ যেখানে প্রতিটা দল একই পয়েন্ট এবং একই গোল পার্থক্য নিয়ে খেলা শেষ করে। সকল দল ৪ পয়েন্ট অর্জন করে। পরবর্তীতে ফিফা প্রতিটা দলের খেলা পর্যালোচনা করে মেক্সিকোকে প্রথম, রিপাবলিক অব আয়রল্যান্ডকে দ্বিতীয় এবং ইতালিকে তৃতীয় ঘোষণা করে পরবর্তী রাউন্ডে খেলার সুযোগ প্রদান করে।

গ্রুপ এফ

এই গ্রুপে সৌদি আরব, নেদারল্যান্ডস, মরক্কো এবং বেলজিয়াম নিজেদের মুখোমুখি হয়। নেদারল্যান্ডস, সৌদি আরব এবং বেলজিয়াম সমান ৬ পয়েন্ট অর্জন করে দ্বিতীয় রাউন্ডে এগিয়ে যায়।

রাউন্ড অব ১৬

গ্রুপ পর্ব হতে নকআউট পর্বে সুযোগ পাওয়া ১৬ টি দলকে নিয়ে এই পর্বের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই পর্বের প্রতিটা খেলার রেজাল্ট নিচে দেওয়া হলো:

রোমানিয়া ৩-২ আর্জেন্টিনা

সৌদি আরব ১-৩ সুইডেন

নেদারল্যান্ডস ২-০ আয়ারল্যান্ড

ব্রাজিল ১-০ যুক্তরাষ্ট্র

মেক্সিকো ১(১)-১(৩) বুলগেরিয়া (পেনাল্টি শুট)

জার্মানি ৩-২ বেলজিয়াম

নাইজেরিয়া ১-২ ইতালি

স্পেন ৩-০ সুইজারল্যান্ড

কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা

রাউন্ড অব ১৬ হতে বিজয়ী ৮ (রোমানিয়া, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, জার্মানি, নাইজেরিয় এবং স্পেন) দলকে নিয়ে এই পর্বের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই পর্বের সকল খেলার রেজাল্ট নিচে দেওয়া হলো:

রোমানিয়া ২(৪)-২(৫) সুইডেন

নেদারল্যান্ডস ২-৩ ব্রাজিল

বুলগেরিয়া ২-১ জার্মানি

ইতালি ২-১ স্পেন

সেমিফাইনাল খেলা

সুইডেন, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া এবং ইতালিকে নিয়ে সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়।

১৩ জুলাই ১৯৯৪ তারিখ জায়েন্ট স্টেডিয়াম, পূর্ব রাদারফোর্ডে প্রথম সেমিফাইনালটি অনুষ্ঠিত হয়। এই ম্যাচে ইতালি বুলগেরিয়ার মুখোমুখি হয়। ইতালি এই ম্যাচে ২-১ গোলে বুলগেরিয়াকে পরাজিত করে ফাইনালে এগিয়ে যায়। ইতালির হয়ে দুইটি গোল করেন আর বেজিও এবং বুলগেরিয়ার হয়ে একটি মাত্র গোল করেন স্টোইচকভ। এই দিন স্টেডিয়ামে ৭৪,১১০ জন দর্শক উপস্থিত ছিল।

একই দিনেই অর্থাৎ ১৩ তারিখে রোজ বোল, পাসাডোনাতে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় ম্যাচে ব্রাজিল এবং সুইডেন মুখোমুখি হয়। ব্রাজিল ১-০ গোলে সুইডেনকে পরাজিত করে ফাইনালে এগিয়ে যায়। খেলার ৮০ মিনিটে রোমারিও ব্রাজিলের হয়ে এবং ম্যাচের একমাত্র জয়সুচক গোলটি করেন। এই ম্যাচে ৯১,৮৫৬ জন দর্শক উপস্থিত ছিল।

৩য় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ

সেমিফাইনালে পরাজিত দুই দল এই ম্যাচে মুখোমুখি হয়। সুইডেন ৪-০ গোলে  বুলগেরিয়াকে পরাজিত করে ৩য় স্থান অর্জন করে। বুরগেরিয়া হয় ৪র্থ। এই ম্যাচটি রোজ বোল, পাসাডেনাতে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। দর্শক ছিল ৯১,৫০০জন।

ফাইনাল ম্যাচ

১৯৯৪ সালের ১৭ জুলাই রোজ বোল, পাসাডোনায় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। খেলার নির্ধারিত সময়ে এবং অতিরিক্ত সময়ে  কোন দলই গোল করতে না পারায় পেনাল্টি শুটআউটের মাধ্যমে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এটি প্রথম বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট যেখানে প্রথম বারের মতো পেনাল্টি শুটআউটের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ করা হয়। পেনাল্টি শুটআউটে ব্রাজিল ৩-২ গোলের ব্যবধানে ইতালিকে হারিয়ে ৪র্থ শিরোপা অর্জন করে। এই ম্যাচের রেফারির দায়িত্ব পালন করেন হাঙ্গেরির সান্দর পুহল। এই ফাইনালে ৯৪,১৯৪ জন দর্শক খেলাটি উপভোগ করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url