HISTORY OF FOOTBALL ( 1990 WORLD CUP )

 

HISTORY OF FOOTBALL ( 1990 WORLD CUP )

১৯৯০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ

এই ফিফা কর্তৃক আয়োজিত পুরুষ জাতীয় ফুটবল দলের ১৪ তম সংস্করণ। এই বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ছিলো ইতালি। যা তাদের দ্বিতীয় আয়োজন। ১৯৯০ সালের ৪জুন থেকে ৪ জুলাই এর মধ্যে টুর্নামেন্টটি সম্পন্ন হয়। তৃতীয়বারের মতো ২৪ টি দল নিয়ে এই টুর্নামেন্ট এর মূল পর্বের খেলা শুরু হয়।

ইতালির ১২ টি শহরে এই টুর্নামেন্টের খেলাগুলো সম্পূর্ন হয়। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে পাশ্চিম জার্মানি তাদের তৃতীয় শিরোপা অর্জন করে এবং আর্জেন্টিনা রানার্সআপ হয়। টুর্নামেন্টে মোট ৫২ টি ম্যাচ খেলা হয়। মোট ১১৫ টি ( ম্যাচ প্রতি গড় ২.২১ )  গোল হয়। টুর্নামেন্টে মোট দর্শক ছিলো ২,৫১৬,২১৫ ( ম্যাচ প্রতি গড় ৪৮,৩৮৯) জন। শীর্ষ স্কোরার এবং সেরা খেলোয়াড় দুইটি পুরষ্কার লাভ করেন ইতালির সালভাতোর শিলাচি। টুর্নামেন্টের সেরা তরুণ খেলোয়াড় নির্বাচিত হন ক্রোয়েশিয়ার রবার্ট প্রোসিনেকি। ফেয়ার প্লে পুরষ্কার লাভ করে ইংল্যান্ড। এই বিশ্বকাপের অফিসিয়াল বলটি ছিলো অ্যাডিডাস ইট্রস্কো ইউনিকো। এই বিশ্বকাপকে খেলার দিক থেকে সবচেয়ে দারিদ্রতম বিশ্বকাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। এই টুর্নামেন্টই প্রথম ছিলো যেখানে জাপানের NHK- এর সাথে ইতালীয় সম্প্রচারকারী যৌথভাবে RAI দ্বারা HD TV তে আনুষ্ঠানিকভাবে রেকর্ড ও সম্প্রচার করা হয়। এই বিশ্বকাপে ম্যাচ প্রতি গোলের গড় অন্যসব বিশ্বকাপের চেয়ে বেশি ছিলো। মোট ১৬ টি লাল কার্ড প্রদান করা হয়।


স্বাগতিক নির্বাচন

১৯৮৪ সালের ১৯ মে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দেশ নির্বাচনের ভোটে ইতালিকে ফিফা কর্তৃক হোস্ট হিসাবে নির্বাচিত করা হয়। এই বিশ্বকাপ আয়োজনের মাধ্যমে ইতালি দুইটি বিশ্বকাপ আয়োজন করা দ্বিতীয় দেশ হয়। ইতালির ১২ টি শহরে খেলা সম্পন্ন হয়।

যোগ্যতা অর্জন

১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে ১১৬ টি দল প্রবেশ করেছিলো। যার মধ্যে শেষ পর্যন্ত ১০৩ টি দল বাছায় পর্বে অংশগ্রহন কর। স্বাগতিক দেশ েইতালি এবং ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা অটোমেটিক এই বিশ্বকাপে সুযোগ পায়। বাকি ২২ দল নির্বানের জন্য মহাদেশীয় কনফেডারেশনগুলির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এই বিশ্বকাপে নতুন তিনটি দল সুযোগ পায় সেগুলো হলো রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড, কোস্টারিকা এবং ইউনাইটেড আরব আমিরাত।১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্ট ফ্রান্স এই বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়।


মূল পর্বে জায়গা পাওয়া ২৪ টি দলের তালিকা নিচে দেওয়া হলো:

সংযুক্ত আরব আমিরাত

দক্ষিণ কোরিয়া

ক্যামেরুন

মিশর

যুক্তরাষ্ট্র

কোস্টারিকা

ব্রাজিল

আর্জেন্টিনা

উরুগুয়ে

কলম্বিয়া

চেকোস্লোভাকিয়া

ইতালি (স্বাগতিক)

অস্ট্রিয়া

ইংল্যান্ড

বেলজিয়াম

রোমানিয়া

নেদারল্যান্ড

স্পেন

স্কটল্যান্ড

সোভিয়েত ইউনিয়ন

যুগোস্লাভিয়া

পশ্চিম জার্মানি

সুইডেন এবং

রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড


প্রথম রাউন্ডের খেলা

এই রাউন্ডে ২৪ টি দলকে ৪ দলের ৬ টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছিলো। গ্রুপের প্রতিটি দল একে অপরের বিরুদ্ধে খেলে। প্রত্যেক জয়ের জন্য ২ পয়েন্ট এবং একটি ড্রয়ের জন্য ১ পয়েন্ট। গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ পরবর্তী রাউন্ডে সুযোগ পাবে। প্রতিটা গ্রুপের তৃতীয় স্থান অর্জনকারী ৬ দলের মধ্যে আরো ৪ দলকে বাছায় করা হয়। পয়েন্ট সমান হলে গোল ব্যবধান, গোলের গড় হিসাব করা হয়।

গ্রুপ এ

এই গ্রুপে চেকোস্লোভাকিয়া, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রিয়া অংশগ্রহণ করে। এই গ্রুপে ইতালি সর্বোচ্চ ৬ পয়েন্ট নিয়ে এবং চেকোস্লোভাকিয়া ৪ পয়েন্ট নিয়ে নকআউট পর্বে এগিয়ে যায়। অস্ট্রিয়া ২ পয়েন্ট নিয়ে এই গ্রুপ থেকে তৃতীয় হয়।

গ্রুপ বি

রোমানিয়া, আর্জেন্টিনা, ক্যামেরুন এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন এই গ্রুপে ছিলো। এই গ্রুপ থেকে ক্যামেরুন এবং রোমানিয়া যথাক্রমে ৪ পয়েন্ট এবং ৩ পয়েন্ট নিয়ে নকআউট পর্বে এগিয়ে যায়। আর্জেন্টিনা ৩ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয়।

গ্রুপ সি

কোস্টারিকা, স্কটল্যান্ড, সুইডেন এবং ব্রাজিল এই গ্রুপে নিজেদের মধ্যে মুখোমুখি হয়। এই গ্রুপ থেকে ব্রাজিল সর্বোচ্চ ৬ পয়েন্ট এবং কোস্টারিকা ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে এগিয়ে যায়। স্কটল্যান্ড ২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয়।

গ্রুপ ডি

যুগোস্লাভিয়া, কলম্বিয়া, পশ্চিম জার্মানি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত এই গ্রুপে নিজেদের মুখোমুখি হয়। পশ্চিম জার্মানি এই গ্রুপ থেকে সর্বোচ্চ ৫ পয়েন্ট অর্জন করে, যুগোস্লাভিয়া ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের নকআউট পর্বে এগিয়ে যায়। কলম্বিয়া ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে তৃতীয় হয়।

গ্রুপ ই

উরুগুয়ে, বেলজিয়াম, দক্ষিণ কোরিয়া এবং স্পেন এই গ্রুপে জায়গা পায়। এই গ্রুপ থেকে স্পেন সর্বোচ্চ ৫ পয়েন্ট এবং বেলজিয়াম ৪ পয়েন্ট অর্জন করে পরবর্তী রাউন্ডে এগিয়ে যায়। উরুগুয়ে এই গ্রুপ থেকে ৩ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয়।

গ্রুপ এফ

এই গ্রুপে ইংল্যান্ড, রিপাবলিক আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং মিশর রয়েছে। এই গ্রুপ থেকে ইংল্যান্ড সর্বোচ্চ ৪ পয়েন্ট এবং রিপাবলিক আয়ারল্যান্ড ৩ পয়েন্ট নিয়ে নকআউট পর্বে এগিয়ে যায়। এই গ্রুপ থেকে নেদারল্যান্ডস ৩ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয়।


রাউন্ড অব ১৬

প্রথম পর্বের ৬ টি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ ( মোট ১২ দল) এবং ৬ টি গ্রুপের তৃতীয় স্থান অধিকারীদের মধ্যে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ  আরও ৪ (আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, নেদারল্যান্ড এবং উরুগুয়ে) দল কে নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের নকআউট পর্বের খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

এই পর্বের প্রত্যেক খেলার রেজাল্ট নিচে দেওয়া হলো:

আর্জেন্টিনা ১-০ ব্রাজিল

যুগোস্লাভিয়া ২-১ স্পেন

আয়ারল্যান্ড ০ (৫)-০ (৪) রোমানিয়া (পেনাল্টি শুটআউট)

ইতালি ২-০ উরুগুয়ে

চেকোস্লোভাকিয়া ৪-১ কোস্টারিকা

পশ্চিম জার্মানি ২-১ নেদারল্যান্ডস

ক্যামেরুন ২-১ কলম্বিয়া

ইংল্যান্ড ১-০ বেলজিয়াম


কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ

রাউন্ড অব থেকে বিজয়ী ৮ (আর্জেন্টিনা, যুগোস্লাভিয়া, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, চেকোস্লোভাকিয়া, পশ্চিম জার্মানি, ক্যামেরুন এবং ইংল্যান্ড) দলকে নিয়ে নকআউট পর্বের এই রাউন্ডের খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

নিচে এই পর্বের খেলার রেজাল্ট দেওয়া হলো;

আর্জেন্টিনা ০(৩)-০(২) যুগোস্লাভিয়া (পেনাল্টি শুটআউট)

আয়ারল্যান্ড ০-১ ইতালি

চেকোস্লোভাকিয়া ০-১ পশ্চিম জার্মানি

ক্যামেরুন ২-৩ ইংল্যান্ড


সেমিফাইনাল খেলা

কোয়ার্টার ফাইনালে বিজয়ী ৪ (আর্জেন্টিনা, ইতালি, পশ্চিম জার্মানি এবং ইংল্যান্ড) দল এই পর্বে খেলার সুযোগ পায়:

প্রথম সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা ইতালির মুখোমুখি হয়। ১৯৯০ সালের ৩ জুন স্টোডও সান পাওলো, নেপলসে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। খেলার নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ১-১ গোলে হলে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট খেলানো হয়। আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করেন ক্যানিগিয়া এবং ইতালির হয়ে গোল করেন শিচালি। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ে আর কেউ গোল করতে না পারলে পেনাল্টি শুটআউট দেওয়া হয়। পেনাল্টি শুটআউটে আর্জেন্টিনা ৪-৩ গোলে জয় লাভ করে ফাইনালে এগিয়ে যায়। এই ম্যাচে ৫৯,৯৭৮ জন দর্শক উপস্থিত ছিলো। এই ম্যাচে আর্জেন্টিনার রিকার্ডেো জিউস্টিকে লাল কার্ড দেখানো হয়।

দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় পশ্চিম জার্মানি এবং ইংল্যান্ড। ১৯৯০ সালের ৪ জুলাই স্টেডিও ডেলে আল্পি, তুরিন এ এই ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। সেমিফাইনালের প্রথম ম্যাচের মতো এই ম্যাচও নির্ধারিত সময় এবং অতিরিক্ত সময়ে ১-১ গোলে সমতা হলে পেনাল্টি শুটঅউট দেওয়া হয়।পশ্চিম জার্মানির হয়ে একটি গোল করেন ব্রম্মে এবং ইংল্যান্ডের হয়ে একটি গোল করেন লাইনকার। পেনাল্টি শুটআউটে পশ্চিম জার্মানি ৪-৩ গোলে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে। এই ম্যাচে ৬২,৬২৮ জন দর্শক ছিলো।

৩য় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ

সেমিফাইনালে পরাজিত দুই দলকে নিয়ে এই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এই ম্যাচে ইতালি ২-১ গোলে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে তৃতীয় স্থান দখল করে। ইতালির হয়ে দুইটি গোল করেন যথাক্রমে ব্যাজিও ও শিল্পাচি এবং ইংল্যান্ডের হয়ে একমাত্র গোল করেন প্ল্যাট। স্টেডিও সান নিকোলা, বারিতে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। মোট দর্শক ছিলো ৫১,৪২৬ জন।

ফাইনাল ম্যাচ

পাশ্চম জার্মানি এবং আর্জেন্টিনা ফাইনালে মুখোমুখি হয়। এই ম্যাচকে বিশ্বকাপ ফাইনালের সবচেয়ে নিষ্ঠুর এবং নিম্নমানের বলে মনে করা হয়। এই ম্যাচে আর্জেন্টিনার মনজোনইকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বিদায় করা হয়। ম্যাচের একমাত্র গোল ৮৫ মিনিটে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে পেনাল্টির মাধ্যমে। পশ্চিম জার্মানি ১-০ গোলে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে তৃতীয় বারের মতো বিশ্বকাপ অর্জন করে। ১৯৯০ সালের ৪ জুলাই তারিখে স্টেডিও অলিম্পিকো, রোমে এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। মোট দর্শক ছিলো ৭৩,৬০৩ জন দর্শক উপস্থিত ছিলো। এই ম্যাচে রেফারির দায়িত্বপালন করেন মক্সিকোর এডগার্ডো কোডেসাল।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url