HISTORY OF FOOTBALL ( 1986 FOOTBALL WORLD CUP )

 

world cup 1986,1986 world cup,1986 fifa world cup (football world cup),maradona 1986,argentina 1986,copa mundial 1986,1986 fifa world cup,diego marado

১৯৮৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ

এটি ফিফা কর্তৃক আয়োজিত পুরুষ জাতীয় দলের ১৩তম সংস্করন। ১৯৮৬ সা্লের ৩১ মে থেকে ২৯ জুনের মধ্যে টুর্নামেন্টি সম্পন্ন হয়। ২৪ টি দলকে নিয়ে আয়োজিত দ্বিতীয় টুর্নামেন্ট। এই টুর্নামেন্টের আয়োজক দেশ ছিলো মেক্সিকো। মোট ম্যাচ হয় ৫২ টি। মোট ১৩২ ( ম্যাচ প্রতি গড় ২.৫৪ ) টি গোল হয়। সম্পূর্ন টর্নামেন্টে মোট দর্শক ছিলো ২,৩৯৪,০৩১ ( ম্যাচ প্রতি গড় ৪৬,০৩৯) জন। শীর্ষ স্কোরার হন ইংল্যান্ডের গ্যারি লিনেকার। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হন দিয়াগো ম্যারাডোনা। সেরা তরুণ খেলোয়াড় নির্বাচিত হন ইতালির এনজো সিফো। ফেয়ার প্লে পুরষ্কার লাভ করে ব্রাজিল। এই বিশ্বকাপের মাধ্যমে আর্জেন্টিনা তাদের দ্বিতীয় শিরোপা অর্জন করে। এই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার নেতৃত্বে ছিলেন ২৫ বছর বয়সি দিয়াগো ম্যারাডোনা। এই বিশ্বকাপের অফিসিয়াল মাসকট ছিল পিকে

স্বাগতিক দেশ নির্বাচন

ফিফা ১৯৭৪ সালের জুন মাসে কলম্বিয়াকে স্বাগতিক দেশ হিসাবে নির্বাচিত করে। কিন্তু ১৯৮২ সালে কলম্বিয়া তাদের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিশ্বকাপ আয়োজনে পদত্যাগ করে। ১৯৮৩ সালে ফিফা মেক্সিকোকে আয়োজক দেশ হিসাবে নির্বাচিত করে। টুর্নামেন্টের ৮ মাস আগে ১৯৮৫ সালের সেপ্টেম্বরে মেক্সিকোতে মারাত্মক ভূমিকম্প হয়। যার কারনে মোক্সকোকে টুর্নামেন্ট আয়োজনের ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ করা হয়েছিলো। কিন্তু স্টেডিয়ামগুলোর কোনো ক্ষতি না হওয়ায় তারা আয়োজন করতে এগিয়ে যায়।

যোগ্যতা অর্জন

কানাডা, ডেনমার্ক এবং ইরান প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন কর। ১৯৫৪ সালের পরে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ কোরিয়া, ১৯৫৮ সালের পর থেকে প্যারাগুয়ে, ১৯৬৬ সালের পর থেকে পর্তুগাল এবং ১৯৭৪ সালের পর প্রথমবারের মতো বুলগেরিয়া এই বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। ইরাক, উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং হাঙ্গেরি ২০২২ সালের হিসাবে এই বিশ্বকাপে শেষবারের মতো মূলপর্বে যোগ্যতা অর্জন করে।

মূল পর্বে জায়গা পাওয়া ২৪টি দলগুলো নিম্নে দেওয়া হলো:

  • দক্ষিণ কোরিয়া
  • ইরাক
  • মরক্কো
  • আলজেরিয়া
  • মেক্সিকো
  • কানাডা
  • ব্রাজিল
  • আর্জেন্টিনা
  • প্যারাগুয়ে
  • উরুগুয়েে
  • উত্তর আয়ারল্যান্ড
  • বেলজিয়াম
  • পোল্যান্ড
  • বুলগেরিয়া
  • পর্তুগাল
  • ডেনমার্ক
  • স্কটল্যান্ড
  • ইংল্যান্ড
  • সোভিয়েত ইউনিয়ন
  • ফ্রান্স
  • স্পেন
  • ইতালি
  • পশ্চিম জার্মানি
  • হাঙ্গেরি
প্রথম পর্বের গ্রুপ ভিত্তিক খেলা:

২৪ টি দলকে মোট ৪ দলের ৬ গ্রুপে ভাগ করা হয়। নিম্নে গ্রুপ ভিত্তিক খেলার রেজাল্ট দেও্রয়া হলো:

গ্রুপ এ

এই গ্রুপে ইতালি, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ কোরিয়া এবং বুলগেরিয়া ছিলো। এই গ্রুপ থেকে আর্জেন্টিনা সর্বোচ্চ ৫ পয়েন্ট এবং ইতালি ৪ পয়েন্ট, অর্জন করে দ্বিতীয় রাউন্ডে এগিয়ে যায়। বুলগেরিয়া ২ পয়েন্ট নিয়া এই গ্রুপে ৩য় হয়।

গ্রুপ বি

প্যারাগুয়ে, মেক্সিকো. ইরাক এবং বেলজিয়াম এই গ্রুপে অংশগ্রহণ করে। এই গ্রুপ থেকে মেক্সিকো সর্বোচ্চ ৫ পয়েন্ট এবং প্যারাগুয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে এগিয়ে যায়। বেলজিয়াম ৩ পয়েন্ট নিয়ে এই গ্রুপ থেকে তৃতীয় হয়।

গ্রুপ সি

ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন, কানাডা এবং হাঙ্গেরি এই গ্রুপে নিজেদের মধ্যে খেলে। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ফ্রান্স সমান ৫ পয়েন্ট নিয়ে পরবর্তী রাউন্ডে এগিয়ে যায়। হাঙ্গেরি ২ পয়েন্ট গ্রুপে তৃতীয় হয়।

গ্রুপ ডি

এই গ্রুপে স্পেন, উত্তর আয়ারল্যান্ড, ব্রাজিল এবং আলজেরিয়া নিজেদের মুখোমুখি হয়। এই গ্রুপ থেকে ব্রাজিল সর্বোচ্চ ৬ পয়েন্ট এবং স্পেন ৪ পয়েন্ট অর্জন করে দ্বিতীয় রাউন্ডে এগিয়ে যায়। এই গ্রুপ থেকে উত্তর আয়ারল্যান্ড ১ পয়েন্ট নিয়ে ৩য় হয়।

গ্রুপ ই

পশ্চিম জার্মানি, স্কটল্যান্ড, উরুগুয়ে এবং ডেনমার্ক এই গ্রুপে খেলার সুযোগ পায়। এই গ্রুপ থেকে ডেনমার্ক ৬ পয়েন্ট অর্জন করে এবং পশ্চিম জার্মানি ৩ পয়েন্ট অর্জন করে দ্বিতীয় স্থান করে। উরুগুয়ে ২ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে তৃতীয় স্থান অর্জন করে।

গ্রুপ এফ

এই গ্রুপে ইংল্যান্ড, মরক্কো, পর্তুগাল এবং পোল্যান্ড  নিজেদের মুখোমুখি হয়। মরক্কো ৪ পয়েন্ট নিয়ে এবং ইংল্যান্ড ৩ পয়েন্ট নিয়ে পরবর্তী রাউন্ডে এগিয়ে যায়। পোল্যান্ড ৩ পয়েন্ট নিয়ে ৩য় হয়।

দ্বিতীয় রাউন্ড

৬ টি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ মোট ১২ দল এবং গ্রুপগুলোর তৃতীয় স্থান দখলকারিদের মধ্যে ৪ ( বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড এবং উরুগুয়ে ) দল নিয়ে এই রাউন্ডের খেলা হয়।

নকআউট পর্ব

আর্জেন্টিনা, ইতালি, মেক্সিকো, প্যারাগুয়ে, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রাজিল, স্পেন, ডেনমার্ক, পশ্চিম জার্মানি, মরক্কো, ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড এবং উরুগুয়ে মোট ১৬ টি দলকে নিয়ে নকআউট পর্ব/ রাউন্ড অব ১৬ এর খেলা শুরু হয়।

রাউন্ড অব ১৬

নকআউট পর্বের সকল খেলার রেজাল্ট নিচে দেওয়া হলো:

আর্জেন্টিনা ১-০ উরুগুয়ে

ইংল্যান্ড ৩-০ প্যারাগুয়ে

ডেনমার্ক ১-৫ স্পেন

সোভিয়েত ইউনিয়ন ৩-৪ বেলজিয়াম

ব্রাজিল ৪-০ পোল্যান্ড

ইতালি ০-২ ফ্রান্স

মরক্কো ০-১ পশ্চিম জার্মানি

মেক্সিকো ২-০ বুলগেরিয়া


কোয়র্টার ফাইনাল খেলা

রাউন্ড অব ১৬ হতে বিজয়ী ৮ ( আর্জেন্টিনা, ইংল্যান্ড, স্পেন, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি, মেক্সিকো এবং মরক্কো) টি দলকে নিয়ে এই রাউন্ডের খেলা শুরু হয়।

এই পর্বের খেলার রেজাল্ট নিম্নে  দেখানো হলো;

আর্জেন্টিনা ২-১ ইংল্যান্ড

স্পেন ১(৪)-১(৫) বেলজিয়াম

(পেনাল্টি শুটআউট)

ব্রাজিল ১(৩)-১(৪) ফ্রান্স

(পেনাল্টি শুটআউট)

পশ্চিম জার্মানি ০(৪)-০(১) মেক্সিকো

(পেনাল্টি শুটআউট)


সেমিফাইনাল খেলা

সেমিফাইনালের প্রথম ম্যাচে ফ্রান্স ২-০ গোলে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে সরাসরি ফাইনালে এগিয়ে যায়। পশ্চিম জার্মানির হয়ে একটি করে গোল করেন ব্রক্ষে েএবং ভোলার। ১৯৮৬ সালের ২৫ জুন তারিখে এস্তাদিও জালিস্কো, গুয়ালাজারায় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। এই ম্যাচে ৪৫,০০০ জন দর্শক উপস্তিত ছিলো।

দ্বিতীয় ম্যাচে আর্জেন্টিনা ২-০ বেলজিয়ামকে পরাজিত করে ফাইনালে এগিয়ে যায়। এই ম্যাচে দিয়াগো ম্যারাডোনা একাই জোড়া গোল করে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়। ২৫ জুন ১৯৮৬ তারিখে এস্তাদিও এস্তেকা, মেক্সিকো সিটিতে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। ১১৪,৫০০ জন দর্শক সেদিন এই ম্যাচটি উপভোগ করেছিলো।

তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ

সেমিফাইনালে পরাজিত দুই দল এই ম্যাচে মুখোমুখি হয়। এই ম্যাচের দর্শক ছিলো ২১,০০০ জন। ফ্রান্স ৪-২ গোলে বেলজিয়ামকে পরাজিত করে তৃতীয় স্থান অর্জন করে। খেলাটি নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ২-২ গোলে সমতা হলে। অতিরক্ত সময় দেওয়া হয় এবং ফ্রান্স আরো ২টি গোল যোগ করে।

ফাইনাল ম্যাচ

১৯৮৬ সালের ২৯ জুন এস্তাদিও এজটেকা, মোক্সকো সিটিতে অনুষ্ঠিত হয়। ফাইনাল ম্যাচটি উপভোগ করার জন্য সেদিন স্টেডিয়ামে ১১৪,৬০০ জন দর্শক উপস্থিত ছিলো। এই ম্যাচের রেফারির দায়িত্ব পালন করেন ব্রাজিলের রোমুয়াল্ডো আরপি ফিলহো। খেলার ২৩ মিনিটের মাথায় বাদামির গোলে আর্জেন্টিনা এগিয়ে যায় এবং হাফ টাইমের আগে আর কোনো দল গোল করেনি। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরুর ৫৫ মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনার পক্ষে ভালদানো আরো একাট গোল করলে আর্জেন্টিনা ২-০ তে এগিয়ে যায়। তারপর পশ্চিম জার্মানি ৭৪ মিনিট এবং ৮০ মিনিটে যথাক্রমে রুমেনিগো ও ভোলার একটি করে গোল করলে খেলা ২-২ তে সমতা বিরাজ করে। কিন্তু ৮৩ মিনিটে আর্জেন্টিনার হয়ে বুরুচগা জয়সুচক গোল করে। আর্জেন্টিনা ৩-২ গোলে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ অর্জন করে।

পুরষ্কার অর্জন

চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা

রানার্সআপ হয় পশ্চিম জার্মানি

তৃতীয় স্থান অর্জন করে ফ্রান্স

চতুর্থ স্থান বেলজিয়াম

ফিফা ফেয়ার প্লে ট্রফি লাভ করে ব্রাজিল

গোল্ডেন বুট অর্জন করেণ গ্যারি লিনেকার (ইংল্যান্ড)

গোল্ডেন বল অর্জন করেন দিয়াগো ম্যারাডোনা (আর্জেন্টিনা)

সেরা তরুন খেলোয়াড়ের পুরষ্কার লাভ করেন এনজো সিফো (বেলজিয়াম)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url