HISTORY OF FOOTBALL ( 1966 WORLD CUP )
১৯৬৬ ফুটবল বিশ্বকাপ
এটি ছিলো ফিফা কর্তৃক আয়োজিত পুরুষ জাতীয় ফুটবল দলের অষ্টম আসর। ১৯৬৬ সালের ১১ জুন থেকে ৩০ জুলাই টুর্নামেন্টি সম্পন্ন হয়। এই বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ ছিলো ইংল্যান্ড। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে ইংল্যান্ড তাদের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র বিশ্বকাপটি অর্জন করে। ব্রাজিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হওয়া সত্তেও তারা গ্রুপ পর্ব থেকেই গ্রহণ করে। মোট ১৬ টি দল অংশগ্রহণ করে। ম্যাচ খেলা হয় ৩২ টি। টুর্নামেন্টে মোট গোল হয় ৮৯ ( ম্যাচ প্রতি গড়ে ২.৭৮ ) টি। গোটা টুর্নামেন্টে মোট দর্শক ছিলো ১,৫৬৩,১৩৫ (ম্যাচ প্রতি গড়ে ৪৮,৮৪৮ ) জন। টুর্নামেন্টে মোট ৯টি গোল করে শীর্ষ স্কোরার হন ইউসেবিও ( পর্তুগাল )। সেরা তরুণ খেলোয়াড় নির্বাচিত হন ফ্রান্জ বেকেনবাওয়ার ( পশ্চিম জার্মানি )। ইংরেজিভাষী বিশ্বে আয়োজিত এটিই ছিলো প্রথম বিশ্বকাপ। সারা ইংল্যান্ডের মোট ৮ টি স্টেডিয়ামে খেলাগুলো সম্পন্ন হয়। এই বিশ্বকাপের ট্রফিটি (জুয়েল রিমেট ট্রফি ) চুরি হয়ে গিয়েছিলো। যা পরে পিকলস নামের একটি কুকুর উদ্ধার করেছিলো। বিভিন্ন মহাদেশে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাছায়কৃত খেলা সম্প্রচার করা প্রথম বিশ্বকাপ ছিলো এটি। বিবিসি ফাইনাল ম্যাচটি স্থানীয়ভাবে সম্প্রচার করে, যা ছিলো সাদা কালো।
হোস্ট নির্বাচন
১৯৬০ সালের ২২ আগস্ট ইতালিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১৯৬৬ সালের আয়োজক দেশ হবে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হওয়া কোনো দেশে আয়োজিত প্রথম বিশ্বকাপ ছিলো এটি।
যোগ্যতা অর্জন
নতুন রেকর্ড তৈরি করে মোট ৭০ টি দেশ এই টুর্নামেন্টের বাছায় পর্বে অংশগ্রহণ কর। অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর ফিফা সিদ্ধান্ত দেয় যে, ইউরোপ থেকে ১০ টি, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ৪ টি, এশিয়া থেকে ১ টি এবং উত্তর এবং মধ্য আমেরিকা থেকে ১ টি দল মূল পর্বে খেলতে পারবে। আফ্রিকানরা িএই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেনি।
উত্তর কোরিয়া এবং পর্তুগাল প্রথমবারের মতো এই বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।
মূল পর্বে জায়গা পাওয়া দলগুলো
বাছায় পর্ব হতে বাছায়কৃত মোট ১৬ টি দল নিয়ে চুড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়
- উত্তর কোরিয়া
- মেক্সিকো
- চিলি
- আর্জেন্টিনা
- ব্রাজিল
- উরুগুয়ে
- ফ্রান্স
- হাঙ্গেরি
- ইংল্যান্ড
- বুলগেরিয়া
- সোভিয়েত ইউনিয়ন
- পর্তুগাল
- ইতালি
- সুইজারল্যান্ড
- স্পেন এবং
- পশ্চিম জার্মানি
খেলার বিন্যাস
যোগ্যতা সম্পন্ন ১৬ টি দলকে মোট ৪টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। গ্রুপ পর্বের খেলায় একটি ম্যাচ জিতলে ২ পয়েন্ট এবং ড্র হলে ১ পয়েন্ট দেওয় হতো। পয়েন্ট সমান থাকলে গোলের গড় হিসাব করা হতো। নকআউট পর্বের খেলায় ৯০ মিনিট সময়ে ড্র হলে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট খেলা হতো । অতিরিক্ত সময় পরেও ড্র থাকলে লটারি ড্র করা হবে । তবে এই টুর্নামেন্টে কোনো লটারি ড্র হয়নি। ফাইনাল খেলায় অতিরিক্ত সময় পরে ড্র হলে রিপ্লে খেলা হবে।
১৯৬৬ সালের ৬ জানুয়ারি টুর্নামেন্টের লটারি প্রথমবারের মতো টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়।
গ্রুপ পর্বের খেলা
১ম গ্রুপ
ইংল্যান্ড, মেক্সিকো, ফ্রান্স এবং উরুগুয়ে এই গ্রুপে খেলে। এই গ্রুপ থেকে ইংল্যান্ড সর্বোচ্চ ৫ পয়েন্ট নিয়ে এবং উরুগুয়ে ৪ পয়েন্ট অর্জন করে তারা নকআউট পর্বে চলে যায়।
২য় গ্রুপ
আর্জেন্টিনা, স্পেন, সুইজারল্যান্ড এবং পশ্চিম জার্মানি দ্বিতীয় গ্রুপে খেলে। এই গ্রুপ থেকে পশ্চিম জার্মানি এরং আর্জেন্টিনা সমান ৫ পয়েন্ট নিয়ে কোয়ার্টালে উঠে যায়।
৩য় গ্রুপ
এই গ্রুপে হাঙ্গেরি, ব্রাজিল, পর্তুগাল এবং বুলগেরিয়া নিজেদের মধ্যে লড়ায় করে। এখান থেকে ৬ পয়েন্ট নিয়ে পর্তুগাল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে এবং হাঙ্গেরি ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে তারা পরবর্তী রাউন্ডে যায়।
৪র্থ গ্রুপ
উত্তর কোরিয়া, ইতালি, চিলি এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন এই গ্রুপে সুযোগ পায়। এই গ্রুপ থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন সর্বোচ্চ ৬ পয়েন্ট নিয়ে েএবং উত্তর কোরিয়া ৩ পেয়েন্ট অর্জন করে নকআউট পর্বে খেলার যোগ্যতা লাভ করে।
নকআউট পর্বের খেলা
কোয়ার্টার ফাইনাল
এই পর্বের পথম ম্যাচে আর্জেন্টিনা ও ইংল্যান্ড মুখোমুখি হয়। অর্জেন্টিনাকে ইংল্যান্ড ১-০ গোলে পরাজিত করে সেমিফািইনালে উঠে যায়।
২য় ম্যাচে পর্তুগাল এবং উত্তর কোরিয়া মুখোমুখি হয়। পর্তুগাল ৫-৩ গোলের ব্যবধানে ম্যাচটি জিতে নেয়। পর্তুগাল সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ পায়।
৩য় ম্যাচে উরুগুয়ে এবং পশ্চিম জার্মানি মুখোমুখি হয়। পশ্চি জার্মানি ৪-০ গোলের বড় ব্যবধানে ম্যাচ জিতে। উরুগুয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে।
৪র্থ ম্যাচে সোভিয়েত ইউনিয়ন ২-১ গোলে হাঙ্গেরিকে হারিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয়।
সেমিফাইনাল
ইংল্যান্ড, সোভিয়েত ইউনিয়ন, পশ্চিম জার্মানি এবং পর্তুগালকে নিয়ে সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়।
১ম ম্যাচে পর্তুগাল এবং ইংল্যান্ড মুখোমুখি হয়। এই ম্যাচটি ২-১ গোলে ইংল্যান্ড জিতে যায়। পর্তুগালের বিদায় হয় এবং ইংল্যান্ড ফাইনালে প্রবেশ করে।
২য় সেমিফাইনাল ম্যাচে পশ্চিম জার্মানি ২-১ গোলে সোভিয়েত ইউনিয়নকে পরাজিত করে এবং পশ্চিম জার্মানি ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।
৩য় ও ৪র্থ স্থান
সেমিফাইনালে পরাজিত দুই ( পর্তুগাল এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ) দলকে নিয়ে এই খেলা হয়। পর্তুগাল ২-১ গোলে সোভিয়েত ইউনিয়নকে হারিয়ে ৩য় স্থান দখল করে এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন হয় ৪র্থ।
ফাইনাল ম্যাচ
এই ম্যাচটি লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে হয়েছিলো। সেই ম্যাচের দর্শক সংখ্যা ছিলো ৯৮,০০০ জন। ম্যাচের শুরুর ১২ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের মাথায় হেলমুট হ্যালারের গোল পশ্চিম জার্মানিকে এগিয়ে নেয়। তার ৪ মিনিট পর ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্ট সেআর সমতায় আনেন। খেলার ৭৮ মিনিটের মাথায় পিটার্সের গোল ইংল্যান্ডকে ২-১ এ এগিয়ে নেয়। শেষ পর্যন্ত খেলা শেষ হয় ৪-২ গোলে। ইংল্যান্ড তাদের প্রথম এবং একমাত্র শিরোপা জয় করে। পশ্চিম জার্মানি হয় রানার্সআপ। ইংল্যান্ড দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে ট্রফি ( জুলস রিমেট ট্রফি ) পেয়েছিলো। এই বিশ্বকাপের ফাইনালটিই সাদা-কালোভাবে সম্প্রচারিত শেষ খেলা।